সার্ভার জটিলতার কবলে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ
উপবৃত্তির জন্য শিক্ষার্থীদের তথ্য সার্ভারে আপলোড নিয়ে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষকরা। ১৬ মে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমের শেষ দিন ছিল রোববার। কিন্তু অধিকাংশ জেলায় ৩০-৪০ শতাংশ তথ্যই আপলোড করতে পারেননি তারা।
কেন না, এ ধরনের পরিস্থিতি মওকা বুঝে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা শিক্ষকদের শাস্তির ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের ঘুস নিয়ে থাকেন। টেলিফোনে যুগান্তরকে এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন তারা।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) মহাপরিচালক আলমগীর মোহাম্মদ মনসুরুল আলম বলেছেন, শুরুর দিকে সার্ভারে সমস্যা ছিল। পরে সার্ভারের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে।
এখন যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য এন্ট্রির কাজ শেষ না হয়ে থাকে তাহলে সময় বাড়ানো হবে। যদি কেউ শিক্ষকদের কোনো ভাবে হয়রানির চেষ্টা করেন, তবে অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, রোববারের মধ্যে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের তথ্য সার্ভারে এন্ট্রির কথা ছিল। এই দুই বিভাগে প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থী আছে। কিন্তু রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র ১০ লাখ ২১ হাজার তথ্য এন্ট্রি হয়েছে।
এই সংখ্যা ৩৩ শতাংশের কিছু বেশি। ঢাকা শহরে এই হার আরও কম। ঢাকা জেলার ১৭ থানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেনানিবাস থানায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ১৭ হাজার ১৫৩ জন। কিন্তু মাত্র ৬১ জনের তথ্য এন্ট্রি হয়েছে।
এভাবে ডেমরায় ৫৯০৯০ জনের মধ্যে ৪২৬ জন, ধামরাইয়ে ৭৩৭৫৫ জনের মধ্যে ১৯৮১, ধানমন্ডিতে ১২৮৫১ জনের মধ্যে ১২১, দোহারে ৪০৪৪৯ জনের মধ্যে ৪২২ জনের তথ্য আপলোড করা সম্ভব হয়েছে।
লালবাগে ৩৬৯১৭ জনের মধ্যে ১৩৭৮ এবং মিরপুরে শিক্ষার্থী আছে ৬৬৪৮৮, এন্ট্রি হয়েছে ১০৭১ জনের। এভাবে বাকিগুলোতেও এই নাজুক পরিস্থিতি।
নাম প্রকাশ না করে রাজধানীর বকসিবাজার এলাকার এক শিক্ষক জানান, সরকারি নির্দেশনা প্রতিপালনে তারা রাত জেগে তথ্য আপলোডের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সার্ভারে তথ্যই নিচ্ছিল না। পরে অবস্থার উন্নতি হওয়ায় কিছু কাজ হয়েছে।
কিন্তু এরই মধ্যে সময় শেষ হয়ে গেছে। আর ময়মনসিংহের এক শিক্ষক জানান, প্রথমে তারা সার্ভার জটিলতায় পড়েন। আর এখন ইন্টারনেটের ফ্রিকোয়েন্সি জটিলতা মোকাবেলা করছেন। এই অবস্থায় ডাটা এন্ট্রির সময় বাড়ানো জরুরি।
ডিপিইর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, আগে প্রকল্পের মাধ্যমে উপবৃত্তির অর্থ দেওয়া হতো। সর্বশেষ প্রকল্পের পক্ষে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান নগদ অর্থ বণ্টনের দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু গত জুলাই থেকে প্রকল্প নেই।
ফলে নগদ যে সফটওয়্যারে কাজ করত সেটিও আর নেই। এ কারণে নতুন করে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়েছে। এখন সরকারি রাজস্ব খাতের অর্থ থেকে উপবৃত্তি দেওয়া হবে। যদিও গত জুলাই থেকে শিক্ষার্থীরা এই অর্থ পায়নি।
এখন গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বকেয়া অর্থ দেওয়া হবে। এরপর চলতি বছরের ৬ মাসের অর্থ দেওয়া হবে। গত জানুয়ারিতে যে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, তার সঙ্গে এখনকার তথ্যের মিল হওয়ার কথা নয়। কেন না, গতবার যে ছাত্রটি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়েছে, এবার সে পঞ্চম শ্রেণিতে।
এ জন্য শিক্ষকদের কষ্ট দিয়ে ৪ মাসের মাথায় ফের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে যেই অভিভাবক যে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের নাম দিচ্ছেন সেটির মাধ্যমে অর্থ পৌঁছানো হবে।